জন্ম নিবন্ধন যাচাই প্রক্রিয়া- Check Birth Registration Online
জন্মের পর সরকারী খাতায় প্রথম নাম লেখানই হচ্ছে জন্ম নিবন্ধন।জন্ম নিবন্ধনের মাধ্যমেই একজন শিশু তার পরিচয় দেশকে ও বিশ্ববাসীকে জানানোর সুযোগ।নবজাতকের নাম ও জাতীয়তা নিশ্চিত করার এটাই আইনগত প্রথম ধাপ।নবজতাক ও পূর্ন-বয়স্ক সবার জন্যই এটা একটি গুরুত্বপূর্ন সনদ।পরবর্তীতে জাতীয় পরিচয়পত্র পেতে হলেও জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রয়োজন হয়।১৮ বছরের কম বয়সীদের জন্য এটাই তাদের পরিচয়পত্র।
২০০৬ সালের আইন অনুযায়ী বয়স, জাতি-গোষ্ঠি, ধর্ম-কিংবা জাতীয়তা সকল নির্বিশেষে বাংলাদেশে জন্ম গ্রহণকারী প্রত্যেকটি মানুষের জন্য জন্ম নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক।ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে ২০১০ সাল থেকে সরকার সরাসারি নিবন্ধনের পাশাপাশি অনলাইনে ও নিবন্ধন কার্যক্রম চালু করে।২০১৩ সাল থেকে শতভাগ মানুষ জন্ম নিবন্ধনের আওতায় এসেছে।
এখন সন্তানকে স্কুলে ভর্তি করাতে হলেও জন্ম নিবন্ধনের প্রয়োজন এছাড়া অনান্য কাজের ক্ষেত্রের এর প্রয়োজন রয়েছে।এখন আমি অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন করার প্রক্রিয়া, যাচাই,জন্ম সনদ ডাউনলোড করার উপায় জানাবো।
জন্ম নিবন্ধন কি কি কাজে লাগেঃ
ক) পাসপোর্ট ইস্যু খ) বিবাহ নিবন্ধন গ) শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি ঘ) সরকারী, বেসরকারী বা স্বায়ত্বশাসিত সংস্থায় নিয়োগদান ঙ) ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু চ) ভোটার তালিকা প্রণয়ন ছ) জমি রেজিষ্ট্রেশন জ) ব্যাংক হিসাব খোলা ঝ) আমদানি ও রপ্তানী লাইসেন্স প্রাপ্তি ঞ) গ্যাস, পানি, টেলিফোন ও বিদ্যুৎ সংযোগ প্রাপ্তি ট) ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (টিআইএন) প্রাপ্তি ঠ) ঠিকাদারী লাইসেন্স প্রাপ্তি ড) বাড়ির নক্সা অনুমোদন প্রাপ্তি ঢ) গাড়ির রেজিষ্ট্রেশন প্রাপ্তি ন) ট্রেড লাইসেন্স প্রাপ্তি ও ত) জাতীয় পরিচয়পত্র প্রাপ্তি।
জন্ম নিবন্ধন আবেদন প্রক্রিয়াঃ
জন্ম নিবন্ধনের নির্ধারিত আবেদন ফরমে (ছাপানো বা হাতে লিখা হলেও চলবে) নিবন্ধকের নিকট নিম্নে বর্ণিত দলিল বা প্রত্যয়নসহ আবেদন করতে হবে। এছাড়াও br.lgd.gov.bd ওয়েব সাইটে প্রবেশ করে সংশ্লিষ্ট নিবন্ধকের কার্যালয় বরাবর অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন আবেদন করতে পারবেন। আবেদনের প্রিন্ট কপি নিবন্ধন অফিসে দাখিল করলে নিবন্ধক জন্ম নিবন্ধন করতে পারবেন (অনলাইনে আবেদন করতে ক্লিক করুন)।
জন্ম নিবন্ধন করতে হলে br.lgd.gov.bd তে গিয়ে অনলাইন রেজিস্ট্রেশন অপশনে ক্লিক করলে একটি ফরম চলে আসবে সঠিকভাবে সেটি পুরন করতে হবে এবং নাম ও বয়স প্রমানের জন্য কিছু ডকুমেন্ট আপলোড করতে হবে।সব কিছু সঠিকভাবে দিলে নিবন্ধন হবে।নিবন্ধন সম্পন্ন হলে আপনার প্রদত্ত মোবাইল নম্বরে মেসেজ চলে আসবে নিবন্ধন নম্বর সহ অথবা
আপনি চাইলে অনলাইন থেকেও সেটি ডাউনলোড করতে পারবেন।এর ১৫ দিন পর জন্ম সনদ তৈরি হয়ে গেলে আপনাকে মেসেজে জানাবে অথবা ১৫দিন পর আপনি যে কেন্দ্র থেকে সনদ নেওয়ার জন্য আবেদন সেখান থেকে সনদ গ্রহন করতে পারবেন অথবা চাইলে অনলাইন পিডিএফ ডাউনলোড করতে পারবেন।এছাড়াও অ্যাপ্লিকশন নম্বর দিয়ে আপনার সনদের আপটেড জানতে পারবেন।
নিবন্ধনাধীন ব্যক্তির জন্মের পাঁচ বৎসরের মধ্যে আবেদন করা হলে-
- তথ্য সংগ্রহকারীর প্রত্যয়ন, অথবা
- ইপিআই কার্ডের সত্যায়িত অনুলিপি, অথবা
- সংশ্লিষ্ট চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের ছাড়পত্র বা উক্ত প্রতিষ্ঠান হইতে প্রাপ্ত জন্ম সংক্রান্ত সনদের সত্যায়িত অনুলিপি, অথবা
- নিবন্ধক যেরূপ প্রয়োজন মনে করেন জন্ম সংক্রান্ত সেরূপ অন্য কোন দলিলের সত্যায়িত অনুলিপি, অথবা
- তথ্য সংগ্রহকারী হিসাবে নিবন্ধক কর্তৃক নির্দিষ্টকৃত কোন এনজিও কর্মীর প্রত্যয়ন।
নিবন্ধনাধীন ব্যক্তির জন্মের পাঁচ বৎসর পরে আবেদন করা হলে-
- বয়স প্রমাণের জন্য এমবিবিএস ডাক্তারের এবং জন্মস্থান বা স্থায়ীভাবে বসবাসের স্থান প্রমাণের জন্য সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলর/সদস্যের প্রত্যয়ন, অথবা
- বয়স ও জন্মস্থান প্রমাণের জন্য তথ্য সংগ্রহকারী হিসাবে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ বা প্রধান শিক্ষক বা তৎকর্তৃক মনোনীত শিক্ষক বা কর্মকর্তার প্রত্যয়ন, অথবা
- বয়স ও জন্মস্থান প্রমাণের জন্য ইপিআই কার্ড বা পাসপোর্ট বা মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট বা কোন চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের জন্ম সংক্রান্ত ছাড়পত্র বা উক্ত প্রতিষ্ঠান হইতে প্রাপ্ত জন্ম সংক্রান্ত সনদের সত্যায়িত অনুলিপি, অথবা
- নিবন্ধক যেরূপ প্রয়োজন মনে করেন জন্ম সংক্রান্ত সেরূপ অন্য কোন দলিলের সত্যায়িত অনুলিপি, অথবা
- তথ্য সংগ্রহকারী হিসাবে নিবন্ধক কর্তৃক নির্দিষ্টকৃত কোন এনজিও কর্মীর প্রত্যয়ন।
জন্ম তথ্য প্রদানকারী কারা?
শিশুর পিতা বা মাতা বা অভিভাবক শিশুর জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে জন্ম সংক্রান্ত তথ্য নিবন্ধকের নিকট প্রদানের জন্য দায়ী থাকবেন।
এছাড়া নিম্নবর্ণিত ব্যক্তিগণ কোন ব্যক্তির জন্ম নিবন্ধনের জন্য নিবন্ধকের নিকট তথ্য প্রেরণ করতে পারবেন।
- ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য, এবং সচিব; গ্রাম পুলিশ;
- সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভার কাউন্সিলর;
- ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন অথবা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মী ও পরিবার কল্যাণকর্মী;
- স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ সেক্টরে নিয়োজিত বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের (এনজিও) মাঠকর্মী;
- কোন সরকারী বা বেসরকারী হাসপাতাল বা ক্লিনিক বা মাতৃসদন বা অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে জন্মগ্রহণের ক্ষেত্রে উহার দায়িত্বপ্রাপ্ত মেডিক্যাল অফিসার অথবা ডাক্তার বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোন কর্মকর্তা;
- নিবন্ধক কর্তৃক নিয়োজিত অন্য কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারী;
- জেলখানায় জন্মের ক্ষেত্রে জেল সুপার বা জেলার বা তৎকর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি;
- পরিত্যক্ত শিশুর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা; নির্ধারিত অন্য কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান।
জন্ম সনদ যাচাইঃ
bdris.gov.bd ওয়েবসাইটে গিয়ে আপনার জন্ম নিবন্ধন নম্বর ও জন্ম তারিখ প্রবেশ করালে জন্ম সনদ যাচাই ও ব্যক্তিগত তথ্য দেখতে পারবেন।