শিশুদের নাম

বাচ্চার জেদ কমানোর ৭টি সূত্র

ছেলে অথবা মেয়ে বাচ্চা যাইহোক দুই একটু কথা বলা শিখার সাথে সাথে বাচ্চারা জেদ করতে শুরু করে। আপনার বাচ্চা যদি এরুপ হয়ে থাকে তা নিশ্চয়ই ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য সুফল হবে না। আপনার বাচ্চা কি খুবই জেদি বা একরোখা? বাচ্চার সাথে সবসময় লেগে থাকতে হয়। কারণে-অকারণে বিনা কারণে, শুইতে গেলে,  পানি পান করতে গেলে, খাইতে গেলে, গোসল করতে গেলে এমনকি এটা রেখে ওটা- কোনোটাতেই তার যেন মন ভরে না। যার ফলে বিভিন্ন কাজের  ব্যাঘাত  ঘটা সত্ত্বেও তবে তা সহ্য করতে হয়।

সুপ্রিয় ভিজিটরস বন্ধুরা আপনারা যদি এই সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকেন বা আপনার জেদি বাচ্চাকে স্বাভাবিক জেদ কমানোর উপায় খোঁজ করে থাকেন তবে বলব আপনি সঠিক জায়গায় অবস্থান করছেন। আমরা এখানে বাসার গেট কমানোর সাতটি সূত্র অভিজ্ঞতার আলোকে এবং সাইন্টিফিক এর সমন্বয়ে ওয়েবসাইটের নিচে সংযুক্ত করেছে। যে সূত্রগুলো ফলো করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আপনার বাচ্চাকে আত্মবিশ্বাসী এবং নৈতিকতার সমন্বয়ে স্বনির্ভর করে তুলতে পারবেন।

সুতরাং, বাচারা কেন যে করে তার সঠিক উৎস  আগে অনুসন্ধান করতে হবে। সাধারণত দেখা যায় যে  6 মাস থেকে 5 বছর পর্যন্ত বাচ্চাদের বেশি হয়ে থাকে।অধিক ভালোবাসা বাচ্চার জেদ বাড়ানোর  অন্যতম উৎস নয় কি? 

আজকের শিশু যেহেতু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ এবং আগামীর রাষ্ট্রনেতা থেকে শুরু করে বৈমানিক, চিকিৎসক, ইঞ্জিনিয়ার এবং  বিজ্ঞানীসহ প্রযুক্তির অন্যতম সেরা আবিষ্কারক হবে, তাই সেই সকল বাচ্চার মধ্যে নৈতিকতা, ধর্মীয় অনুভূতি এবং আত্মনির্ভরশীলতা  সেট করে দেওয়ার দায়িত্ব আপনার আমার সকলের। কাজেই, আসুন তাহলে আমাদের আদরের সোনামনিদেরকে জীবনের শুরু থেকেই ভালো কিছু শিক্ষা দেই। 

বাচ্চাদের  অন্তরের ডিকশনারি থেকে না শব্দটি তুলে দেওয়ার চেষ্টা করি। তাহলেই আগামীর পৃথিবী হবে  নির্ভেজাল  এবং দূষণমুক্ত।বাচ্চাদেরকে বাস্তবতা এবং নিয়মমাফিক জীবনের রুটিন সেট করে দিতে পুরো কনটেন্টটি ভালভাবে পড়ুন।

বাচ্চারা কেন জেদ করে?

বাচ্চারা সাধারণত জেদ করলে নিজেকে ধন্য মনে  করে। এ রোগ হওয়ার কারণ সাধারণত অধিক ভালোবাসা এবং চাওয়ার চেয়ে পাওয়ার পরিমাণ বেশি ।যেমন ধরুন- শীতের দিনে আপনার বাচ্চা আইসক্রিম খেতে  চাইবে-  আইসক্রিম খাওয়ার জন্য সে আপনার কাছে প্রাণ প্রাণ মিনতির শহীদ কান্না শুরু করে দিল। সে কান্না থামাতে গিয়ে আপনি হিমশিম খাওয়ার পরেও বাধ্য হয়ে  আইসক্রিম কিনে দিলেন অথবা রাগ করে দুটি  চড় থাপ্পড় দিয়ে বসলেন, তাতে  কি কোন পজিটিভ ভূমিকা আসবে?নিশ্চয়ই না !

আপনি যদি এরূপ অবস্থার সম্মুখিন হয়ে থাকেন তাহলে আদরের শহীদ বাচ্চাটিকে বুঝি বলুন বা অন্য কিছুর সাথে তুলনা করে শিখিয়ে দিন  যে- যে দাঁত দিয়ে তুমি খাবার খাও, আইসক্রিম খেলে সেই দাঁত নষ্ট হয়ে যাবে ফলে তুমি আর অন্য কিছু খাইতে পারবেনা।  এছাড়াও উপস্থিত বুদ্ধির সমন্বয়ে সেই সমস্যার  সমাধান করার সর্বাধিক চেষ্টা করতে পারেন।যদি তাতেও কাজ না হয় তাহলে নিচের সূত্রগুলো এপ্লাই করুন।

বাচ্চার জেদ কমানোর ৭টি সূত্র

সূত্র নং- ১

বাস্তব উদাহরণ- বাচ্চা যখন রাগ করেকোন কিছু ভেঙ্গে ফেলে, অথবা অন্যকে আঘাত করে বা কাউকে কামড়ে দেয় তখন সেই অবস্থায়  বাচ্চার উপর  চটে গিয়ে তার রাগ হওয়ার কারণ জানতে চাওয়া বোকামির পরিচয়।  আপনার বোঝা উচিত যে কোনো কারণবশত আপনার বাচ্চা ইতিমধ্যে এটম বোমার মত ফুলে রয়েছে।

সুতরাং, সেই অবস্থায় বাচ্চাকে কোন কিছু না বলে আগে তাকে শান্ত করে নেওয়া উচিত। তারপর রাগের কারণ জিজ্ঞেস করে একটি বাস্তব উদাহরণ এর মাধ্যমে বাবাকে বুঝিয়ে  দেওয়া দরকার। যেমন ধরুন আপনি বলতে পারেন- তুমি যে অন্যকে আঘাত করলে তা যদি তোমাকে কেউ পড়তো তাহলে তোমার কেমন লাগতো বা তোমার ছোট বোনকে কেউ  কামড়ে দিলে নিশ্চয়ই সে অনেক ব্যাথা  পেত। তখন কি তোমার খারাপ লাগত না? 

সুতরাং, বাচ্চা যদি কখনো খারাপ কাজ করে ফেলে তাহলে- নিজের উদাহরণ দিয়ে বাচ্চাকে বুঝিয়ে দেওয়াই শ্রেয়। বাচ্চারা সাধারণত কোমলমতি হয়ে থাকে। বোঝানোর পরিবেশ সৃষ্টি করে বাচ্চাকে যা বলবেন সে তাই করবে, তবে অবশ্যই তা  ঠান্ডা মাথায় করতে হবে।

সূত্র নং- ২

ধর্মীয় অনুরাগ সৃষ্টি- বাচ্চাকে সৃষ্টিকর্তার যাবতীয় বিষয়বস্তু বুঝিয়ে দেওয়া  দরকার। খারাপ কাজ করলে সৃষ্টিকর্তা পাপ দেয়, ভালো কাজ করলে সৃষ্টিকর্তা অনেক রহমত নাজিল করে এই উপলব্ধি শিশুর অন্তরে  সেট করে দিতে হবে।যেমন ধরুন-  বড়দের সম্মান করা, অন্যকে সালাম দেওয়া, রাগ না হওয়া, পিতা মাতার কথা পালন করা ইত্যাদি। 

এক কথায়, সমাজের কোন কাজ ভালো এবং কোন কাজ খারাপ তার একটি সফটওয়্যার  বাচ্চার মাথায় ইন্সটল করতে হবে। করে সেই বাচ্চাটি  আর খারাপ কোনো কিছুর প্রতি মনোনিবেশ করবে না। ফলে নৈতিকতা থেকে শুরু করে সামাজিক, পারিবারিক সহ সকল কাজে সে বাচ্চা  পজিটিভ ভূমিকা রাখবে।

সূত্র নং- ৩

সমান অধিকার- একটি পরিবারের একাধিক সন্তান থাকতে পারে। ছেলেমেয়ে যাই হোক না কেন সকলের প্রতি সমান অধিকার বাঞ্ছনীয়। তাই, শিশুর মনে সমানাধিকার সফটওয়্যার ইনস্টল করে দিতে পারলে কোন কিছু কম-বেশি নিয়ে বাচ্চাকাচ্চা আর রাগ করবেনা। তবে সেদিকে মাতাপিতাদেরকে সর্বদা লক্ষ্য রাখতে হবে।

সূত্র নং- ৪

আদর করা- আদর করলে বা বাচ্চাকাচ্চা সাথে সময় অধিক সময় ব্যয় করলে বাচ্চারা তার ভক্ত হয়ে যায় । আদর্শ বাচ্চাদের সাথে খেলাধুলা করা অথবা তাকে আনন্দ দেওয়ার যাবতীয় সামগ্রী প্রদান করা মাতা পিতার দায়িত্ব। কোলে নিয়ে বাচ্চাকে আদর করা অথবা বেশি করে চুমু খাওয়া  বাচ্চার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।  সাইন্টিফিকরা বলেন -বাচ্চাকে নিয়মিত চুমু খেলে তার বাচ্চার মন  এবং শরীর উভয়ই ভালো থাকে।

সূত্র নং- ৫

প্রশ্রয় না দেওয়া- শিশুরা সাধারণত ভালো-মন্দের বিচার-বিবেচনা অতি তাড়াতাড়ি করতে পারে না। তাই শিশু খারাপ কাজ করতে চাইলে তাদের প্রশ্রয় না দিয়ে বিষয়টিকে পূর্ণভাবে বাচ্চার সামনে উপস্থাপন করা দরকার।  এক্ষেত্রে আপনি বাস্তব উদাহরণ এর সাহায্য নিতে পারেন।

সূত্র নং- ৬

নিজে শুদ্ধ হওয়া- বাচ্চারা সাধারণত অন্যকে অনুকরণ করে বড় হয়। আপনি নিজে সর্বদা  রাগারাগি করেন মাথা গরম করে অন্যকে বকাবকি করেন,  আর নিজের বাচ্চাকে রাগারাগি এবং বকাবকির  কুফলের বাণী শোনাবেন- তাহলে  বাচ্চার কাছ থেকে ভালো কিছু চাওয়া বোকামি ছাড়া আর কিছুই হবে না । 

আবার আপনি যদি ঘরে নামাজ পড়েন, তাহলে দেখবেন বাচ্চারাও আপনাকেও  অনুকরণ করে  নামাজ পড়ছে।  আপনাকে ল্যাপটপ  চাপাচাপি  করতে দেখলে- বাচ্চারা ল্যাপটপ চাপাচাপি করতে চাইবে এটাই স্বাভাবিক। সুতরাং, বাচ্চাদের শেখানোর আগে নিজের মধ্যে সুশিক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে হবে।

সূত্র নং- ৭

বাচ্চাকে গুরুত্ব দেওয়া-  বর্তমান সময়ে দেখা  যায় যে,  অনেক মাতা -পিতা মোবাইল নিয়ে ফেসবুক এবং টুইটারে অধিক সময় ব্যয় করে। ফলে  বাচ্চা কি বলতে চায়  তা গুরুত্ব দেওয়া হয় না। যার ফলে বাচ্চা খারাপ কাজ করার  প্রতি আকর্ষণ জন্ম নেয়।  সুতরাং, বাচ্চারা কি করতে চয় এবং কি বলতে  চায়- তার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া প্রত্যেক মাতা-পিতার একান্ত দায়িত্ব।

পরিশেষে বলা যায় যে, আপনার বাচ্চা কেমন হবে তার পুরোটাই আপনার উপরেনির্ভর করবে। তাই একটি আদর্শ সন্তান গড়ে তোলার আগে আদর্শ মাতা-পিতা  তৈরি হওয়াই উত্তম।

Show More

মোঃ জাহিদুল ইসলাম

আমি মোঃ জাহিদুল ইসলাম । 2018 সাল থেকে সমাজের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক,মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি অবলোকন করে- জীবনকে পরিপূর্ণ আঙ্গিকে নতুন করে সাজানোর আশাবাদী। নতুনের প্রতি মানুষের আকর্ষণ চিরস্থায়ী- তাই নবরুপ ওয়েবসাইটে নিয়মিত লেখালেখি করি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button